মহামা’রি করো’নাভাই’রাসে আ’ক্রান্ত ও মৃ’তের সংখ্যা প্রতিদিনই উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। যার ফলে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুর করে আফিস আ’দালত কয়েক দফায় বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
যদিও ঈদ সামনে রেখে আগামী ১০ মে থেকে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তবে এবার সাধারণ ছুটি না রেখে মানুষকে সচেতন করে স্বাভাবিক কাজকর্ম ও জনজীবন সচল করার কথা ভাবছে সরকার। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, মুখে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধোয়া ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অভ্যাস সৃষ্টি করার মাধ্যমে মানুষের মাঝে করো’না আতঙ্ক কমে যাবে।
একইসঙ্গে দেশের অর্থনীতির চাকা ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন-জীবিকা সচল রাখার জন্য পরবর্তী মেয়াদে সাধারণ ছুটি না বাড়ানো নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, মানুষকেও বাঁ’চাতে হবে, অর্থনীতির চাকাও সচল রাখতে হবে। এ ধারণা থেকে নভেল করো’নাভাই’রাস মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি পরিহার করার পথে যেতে চায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। সাধারণ ছুটি আরো দীর্ঘমেয়াদি হলে অর্থনীতির ওপর দারুণভাবে প্রভাব পড়বে। তাই সবকিছু থামিয়ে দিয়ে আর বেশিদিন থাকতে চাচ্ছে না সরকার। এরই মধ্যে সরকার সীমিত আকারে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানাও খুলে দিয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে খোলা হচ্ছে দোকানপাটও।
এ ব্যাপারে সরকারের একজন মন্ত্রী বলেন, সাধারণ ছুটি বা লকডাউন দিয়ে লাগাম টানা সম্ভব হচ্ছে না নভেল করো’নাভাই’রাসের। আবার সাধারণ জনগণকেও ঘরে আ’ট’কে রাখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিশ্বের অন্য দেশগুলোও এখন লকডাউনের বিকল্প ভাবতে শুরু করেছে। উন্নত দেশগুলোও অর্থনীতির হু’মকির কথা ভাবতে শুরু করেছে। সেই চিন্তা থেকেই ইতালি, স্পেনসহ কিছু দেশ এরই মধ্যে লকডাউন শিথিলও করেছে। নভেল করো’নাভাই’রাস মোকাবেলায় এখনো কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। ফলে এ দু’র্যোগ আমাদের আরো ভোগাবে। এ পরিস্থিতিতে সরকারকে করো’না মোকাবেলায় নতুন কিছু ভাবতে হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, নভেল করো’নাভাই’রাস মোকাবেলায় সাধারণ ছুটি বা লকডাউনের বিকল্প পদ্ধতি কী’ হতে পারে- সে প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবছে সরকার। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অভ্যস্ত হতে হবে। সচেতন, সতর্কভাবে স্বাভাবিক কাজে নিশ্চয়ই ফিরতে হবে।
তিনি বলেন, পৃথিবী থেকে নভেল করো’নাভাই’রাসের প্রাদুর্ভাব কখন বিদায় নেবে সেটা নিয়ে স’ন্দেহ আছে। কারণ এখনো এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। কয়েকটা আবিষ্কারের কথা বললেও সেটার এখন পর্যন্ত কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। বিগত শতাব্দীতে যে স্প্যানিশ ফ্লু মহামা’রীর প্রতিষেধক আবিষ্কার হতে প্রায় ১০ বছরের মতো সময় লেগেছিল। এখন বিজ্ঞান এগিয়ে গেছে, তাই হয়তো কম সময় লাগবে। কিন্তু আমাদের তো থেমে থাকলে চলবে না। সচেতন হয়ে সবাইকে নিজের কাজ করতে হবে। জীবন-জীবিকা চালু রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মক’র্তা বলেন, করো’না মোকাবেলায় কী’ করা যায়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কী’ উপায়ে পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হচ্ছে, সে বিষয়গুলোও তিনি পর্যালোচনা করছেন। এছাড়াও দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন, সাময়িকী’, গবেষকদের গবেষণার অগ্রগতি সবকিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি নিজেও বিকল্প উপায়ে কী’ভাবে করো’না মোকাবেলা করা যায়, সে পথ বের করার চেষ্টা করছেন। সাধারণ ছুটি অব্যাহত রেখে মানুষকে ঘরে আ’ট’কে রেখে আসলে সে অর্থে সমাধান সম্ভব হচ্ছে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতনতা, সতর্কতা অবলম্বন করে মানুষকে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক অবস্থায়, স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে আনার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী। তিনি মনে করেন, অর্থনীতিও বাঁ’চাতে হবে, বাঁ’চাতে হবে মানুষকেও। এ দুটি বিষয় বিবেচনা করেই করো’না মোকাবেলার পথ ভাবছে সরকার।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক দেশ। চীন, সৌদি আরব কিংবা ই’রানের মতো নয়। এদেশে কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া যায় না। সরকার গত দেড় মাসের মতো লকডাউন করে জনগণকে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। এর অংশ হিসেবে মানুষকে বলা হচ্ছে, নভেল করো’নাভাই’রাস সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে ঘরে থাকুন। আর যদি বের হতেই হয়, তাহলে সব ধরনের সুরক্ষা নিয়ে বের হন। গত দেড় মাস ধরে এটা অভ্যাস করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। অনেকেই সচেতন হচ্ছে, আবার কেউ কেউ হচ্ছে না।
তিনি বলেন, এখন কি কাউকে পি’টিয়ে এসব বিষয় মানাবে নাকি? অ’তীতে দেখা গিয়েছিল, বিভিন্ন সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে পি’টিয়েছে। এমনকি ভা’রতেও এবার পে’টানো হয়েছে। কিন্তু আম’রা কাউকে এমন নির্দেশ দিইনি। লা’ঠি দিয়ে পে’টানো হয়নি। মানুষকে বোঝানো হয়েছে।
ফারুক খান আরো বলেন, আমাদের দেশে ঈদকেন্দ্রিক একটা বড় ব্যবসা হয়। গত রমজানের ঈদেও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছিল। এ ব্যবসাটা শুধু ব্যবসায়ীদের হয় না, সবাই সুবিধা ভোগ করে। তাই সবার কথা চিন্তা করে সরকার বলছে সামনে ঈদ আছে। তোম’রা খুলতে পার। তবে সেটা অবশ্যই সুরক্ষা নিশ্চিত করেই খুলতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভ’য়কেই এ সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি মনে করি, সরকার এটা ভালো করেই পর্যবেক্ষণ করছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি আগামী দুই থেকে তিন বছর পৃথিবীতে স্বাভাবিক জীবনযাপন হবে না। মানুষ বের হবে মাস্ক পরে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবে। সবাইকে অ্যাডজাস্টমেন্ট করে চলতে হবে। এখন আমাদের প্রযু’ক্তিকে ব্যবহার করে জীবনকে আরো সহ’জ করতে হবে। এরই মধ্যে আমাদের চলতে হবে, অগ্রসর হতে হবে। অর্থনৈতিক কমকা’ণ্ড চালু করতে হবে।
সিটি২৪নিউজের ফেসবুক পেজে লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন