অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, মার্ক ওয়াহ, সনাৎ জয়সুরিয়া, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, মারভান আতাপাত্তু,বীরেন্দ্র শেওয়াগ তিলকরত্নে দিলশান থেকে শুরু করে হালের হাশিম আমলা, স্টিভ স্মিথ, ক্রিস গেইল, রোহিত শর্মা, শোয়েব মালিক, মহেন্দ্র সিং ধোনি।
এই নাম গুলোর সাথে আমরা সবাই খুব বেশীই পরিচিত এবং তাদের ব্যাটিং সম্পর্কে আমাদের সবারই ধারণা আছে। এদের প্রায় সবাই ওপেনার আর বাকী দুয়েকজন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে এদের সবাই ব্যাট করেছিলেন মিডল অর্ডার, লোয়ার মিডল অথবা লোয়ার অর্ডারে। টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ কিংবা অধিনায়কের সাহসী সিদ্ধান্ত আর নিজেদের পারফর্মম্যান্সে এরা নিজেদের প্রমাণ করেছেন পিওর টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে। বাকীটুকু রেকর্ড আর ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে।
অ-১৯ বিশ্বকাপে আমাদের দলগত সেরা সাফল্য কোনটি? অবশ্যই ২০১৬ সালে সেমিতে খেলা। ৩য় হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সে বিশ্বকাপ থেকে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি হিসেবে আশা করা হয়েছিলো মেহেদি হাসান মিরাজ, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাইফ উদ্দিন, শাওন, জাকির, হালিমদের। কিন্তু মিরাজ ছাড়া আর কেউই এখনো জাতীয় দলে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি কিংবা সুযোগ মিলেনি।
মিরাজ নামটা বাংলাদেশের টেস্ট একাদশে অটোচয়েজ একটা নাম হয়ে গেছে, ওয়ানডেতেও পুরোপুরিভাবে নিয়মিত নাম হয়ে উঠছে, টি টুয়েন্টিতেও সুযোগ পাচ্ছেন নিয়মিত। কিন্তু মিরাজের দলে ভূমিকাটা কোন জায়গায়? উত্তরটা অলরাউন্ডার হলেও, তিনি মূলত দলে আছেন স্পিন স্পেশালিষ্ট হিসেবে, বাড়িয়ে বোলিং অলরাউন্ডার।
কিন্তু এই মিরাজ কি অ-১৯ য়ে বোলিং অলরাউন্ডার ছিলেন? খেলেছিলেন ব্যাটসম্যান অলরাউন্ডার হিসেবে। খেলতেন টপ অর্ডারে আর বোলিং করতেন ১০ ওভার পুরোটা। অ-১৯ বিশ্বকাপে ৫ ইনিংসের ৪ টিতেই ফিফটি আছে তার। ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছিলেন ব্যাটে বলে সমান তালে পারফর্ম করে। ৫ ইনিংসে ৬০.৫ গড়ে করেছেন ২৪২ রান, আর ৬ ইনিংসে নিয়েছেন ১২ উইকেট।
প্রশ্ন জাগতে পারে তাহলে তিনি বোলিং অলরাউন্ডার কিভাবে হলেন? উত্তরটা হবে টিম কম্বিনেশনের কারণে। ৩/৪/৫ নাম্বারে খেলতে অভ্যস্ত জাতীয় দলে এসে খেলতে হচ্ছে ৭ কিংবা ৮ অথবা ৯ নাম্বারে। তিনি যখন ক্রিজে আসেন তখন বলও বাকী থাকেনা এতোটা। আর যেদিন অনেক বল পেয়ে থাকেন সেদিন দলের করুণ অবস্থাতেই ব্যাটিং পান। তখন তাকে শুরু করতে হবে কিন্তু অপর প্রান্তে সাপোর্ট দেওয়ার মতো ব্যাটসম্যান থাকে না।
থাকলে তিনি কি করতে পারেন? তার সামর্থ্য কতটুকু? সেটা সেদিন মাশরাফির সাথে ৬৬ রানের জুটি আর ব্যক্তিগত ৫০ বলের ৪২ রানের ইনিংস থেকেই। এর আগেও ওয়ানডেতে দলের বিপর্যয়ে একটি অর্ধশতক করেছেন বোলিং অলরাউন্ডার ট্যাগ পাওয়া এই ব্যাটসম্যান।
মিরাজ কখনোই ‘ব্যাটসম্যান মিরাজ’ নামের প্রতি সুবিচার করতে পারবেন না যদি না তার ব্যাটিং অর্ডার চেঞ্জ করে তাকে টপ অর্ডার কিংবা আপার মিডলে না খেলানো হয়। ধোনি আর সৌরভের সেই কাহিনী নিশ্চয় সকলেরই জানা আছে। শোয়েব মালিকের টপ অর্ডারে উঠে আসার কিংবা জয়সুরিয়ার ওপেনার হওয়ার ঘটনা।
আমরা নতুন কোনো জয়সুরিয়া বা মার্ক ওয়াহ চাই না। আমরা চাই মিরাজ একাদশে থাকলে যেনো ব্যাটে বলে পারফর্ম করার সুযোগটা পায় সেই সুযোগ। আমরা চাই দলের ব্যাটিং লাইন আপ আরো শক্তিশালী হোক, মিরাজের মেধা আর প্রভিভার সঠিক মূল্য দেওয়া হোক। একজন সাকিব যেমন দুজনের কাজ করে, আশা করি সুযোগ পেলে মিরাজও ঠিক তাই করতে পারবে। কারণ সাকিবের অবসরের পর এই মিরাজই হবেন আমাদের ভবিষ্যৎ সাকিব কিংবা দলের কাণ্ডারি। তাই চাইবো মিরাজ যেন আশা জাগানিয়া সেই মিরাজ হয়েই আবার ফিরে আসে।
অনেক তো এক্সপেরিমেন্ট চালালো টিম ম্যানেজমেন্ট। এবার অন্তত মিরাজকে উপরের দিকে খেলিয়ে বাজিয়ে দেখা যেতে পারে। আশা করি বিসিবিকে নিরাশ হতে হবে না, যদি ভবিষ্যৎ নিয়ে প্ল্যানিং থেকে থাকে। শুভ কামনা রইলো মেহেদি হাসান মিরাজের জন্য।
লেখা: ইশতিয়াক শাহরিয়ার শাওন (ক্রিকেটখোর)
সিটি২৪নিউজের ফেসবুক পেজে লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন