শিরোনাম

প্রচ্ছদ /   রেস্তোঁরায় ওয়েটারের কাজ করে যেভাবে জীবিকা চালাচ্ছেন ক্রিকেটার রাসেল

রেস্তোঁরায় ওয়েটারের কাজ করে যেভাবে জীবিকা চালাচ্ছেন ক্রিকেটার রাসেল

Avatar

বুধবার, অক্টোবর ১০, ২০১৮

প্রিন্ট করুন

ব্যয়বহুল খেলা হিসেবে পরিচিত ক্রিকেট এখন নিঃসন্দেহেই বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় খেলায় পরিণত হয়েছে।আর জনপ্রিয়তার সুবাদে ক্রিকেটারদের বেতন ভাতাও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আকাশচুম্বী এ খ্যাতি, মোটা অঙ্কের আয় আর উন্নত জীবনযাত্রার মান দেখে অনেক তরুণই আগ্রহী হচ্ছে এ খেলাকে নিজের পেশা হিসেবে বেছে নিতে।

কিন্তু বাস্তবতা কি আসলেই এরকম! যদিও পুরুষ ক্রিকেট দল নিয়ে কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে ক্রমশ উন্নতির পরও নারী ক্রিকেটারদের বেতন বৈষম্যের কারণে একাধিকবার আলোচনায় এসেছে বিসিবি। বিশেষ করে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হবার পর এ আলোচনা আরও জোরালো আকার ধারণ করেছিল।

যার ফল হিসেবে তখন চুক্তিবদ্ধ নারী ক্রিকেটারদের বেতন সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে নতুন বেতন কাঠামোয় সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা করা হয়। যেখানে পুরুষ ক্রিকেটারদের বেতন প্রায় ২ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।

তবুও দীর্ঘদিন পর কিছুটা হলেও বৈষম্য দুর হওয়ায় স্বস্তি ফেরে নারী ক্রিকেট মহলে। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের দিকে যেন একদমই নজর দিতে নারাজ বিসিবি।

এখন পর্যন্ত বেতনভুক্তই করা হয়নি এ দলের অন্তর্ভুক্ত খেলোয়াড়দের। এছাড়া বিসিবি থেকে কোন ধরনেরই সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় না তাদের। যার ফলে প্রতিনিয়তই দুঃখকে সাথী করে দিন কাটাতে হচ্ছে খেলোয়াড়দের। জীবন বাঁচাতে বেছে নিতে হচ্ছে সমাজের নিন্মস্তরের কাজগুলোকে।

গতকাল ৮ অক্টোবর এ দলেরই এক ব্যাটসম্যান শাওন সিকদারের দুঃসহ জীবনের গল্প উঠে আসে বিডিক্রিকটাইমে প্রকাশিত “দিনমজুরি করে স্বপ্নের পথে ক্রিকেটার শাওন” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে। একাধিকবার বিশ্বের বুকে গর্বের সাথে নিজ দেশের নাম উজ্জল করলেও জীবন বাঁচাতে দিনমজুরিকেই পেশা হিসেবে নিতে হয়েছে তাকে। এছাড়া ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতে এর সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য অটো-রিক্সা ও ইজিবাইক চালিয়ে অর্থ উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছে শাওন। ”

এর পরপরই বিবিসি বাংলা’র প্রতিবেদনে উঠে এল এ দলের আরেক ক্রিকেটার রাসেল শিকদার করুণ কাহিনী। যাকে জীবন রক্ষার তাগিদে বেছে নিতে হয়েছে বেয়ারার কাজকে। শরীয়তপুরে গিয়ে এ ক্রিকেটারের দেখা পান বিবিসি’র এক সংবাদদাতা বলে দাবী সংবাদ মাধ্যমটির। পরে তার সাথে আলাপচারিতায় উঠে আসে শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের নানা দিক।

দলটিতে বোলার হিসেবে খেলা চালিয়ে যাচ্ছে রাসেল। বিবিসির সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, “আমার এক বছর বয়সের সময় টাইফয়েড জ্বর হয়। তখন আমি ভাবতাম না যে আমার এইরকম একটা সমস্যা হবে। আমি যে প্রতিবন্ধী হয়ে যাব তা কখনও আমার চিন্তাভাবনাতে আসে নাই। তবুও বড় হওয়ার সাথে সাথে খেলা চালিয়ে যেতে থাকি। ”

রাসেল আরও বলে, “অনেকে অনেক কথা বলত, যে তুই খেলে কি করবি? জবাবে বলতাম, খেলাটা আমার ভালোলাগে, ভালোবাসি একে। দেখি কতদুর যাওয়া যায়। খেলার জন্য এসএসসি পরীক্ষাটাও আমি দিতে পারি নাই। যখন আমার টেস্ট পরীক্ষা শুরু হয় তখন আমি প্রথম অনুর্ধ্ব-১৮ গ্রুপে চান্স পাই।

তখন আর পরীক্ষা দেওয়া হয় নাই, আর এরপর থেকে পড়ালেখাটাও আর ওইরকমভাবে হয়ে ওঠে নাই। ২০১৪ সালে প্রথম শারীরিক প্রতিবন্ধী ন্যাশনাল ক্যাম্পে চান্স পাই। ২০১৪ সালেই ভারতে এশিয়া কাপ খেলতে যাই। এছাড়া দুবাই গেছি, ইংল্যান্ড গেছি, ইন্ডিয়া গেছি, বাংলাদেশেও একটি টুর্নামেন্ট হইছিল, ওইটায় অংশ নিছি। কয়েকটা টুর্নামেন্টে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হইছি এবং হায়দ্রাবাদে একটা টুর্নামেন্ট হইছিল। ফাইনাল ম্যাচ ছিল, যেটা সুপার ওভার পর্যণ্ত গড়িয়েছিল। ওই সুপার ওভারে আমি বল করে ম্যাচটারে জিতাই। ”

এতসব অর্জনের পরও কোন আর্থিক সহায়তা না পেয়ে এক প্রকার আক্ষেপের সুরই জেগে উঠে রাসেলের কন্ঠে। বাধ্য হয়ে রেস্তোঁরায় কাজ করা এ ক্রিকেটার বলেন, “ক্রিকেট খেলাকে একটা রাজকীয় খেলাই বলা চলে। যাতে অনেক ব্যয়বহুল খরচ। প্রতিদিন প্র্যাক্টিস করতে গেলে, একটা বল কিনতে গেলে সর্বনিন্ম ৫০০ টাকা লাগে। আমি স্ট্রাইক বলার, আমাকে সবসময় নতুন বল দিয়ে বল করতে হয়। সেই সামর্থ্যটা আমার নাই। এজন্যই এখন আমার এই রেস্টুরেন্টে কাজ করতে হয় নিজের অর্থ যোগানোর জন্য। ”

বেতনভুক্ত না হওয়ায় নানা ধরনের আর্থিক সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মাশরাফি, সাকিব ওরা যেরকম বেতনভুক্ত, আমরা ওরকম বেতনভুক্ত না। এখন বেতনভুক্ত যদি না হয় তাহলে আমাদের চলাফেরার সমস্যা হয়। তাই বিধায় দেখা গেছে এখন পরিস্থিতির শিকার হয়ে আমার এই খেলাই ছেড়ে দিতে হবে। ”

নানা অভিযোগ আর প্রতিবন্ধকতা সত্বে এখনও দেশের মানুষের মন জয়ের স্বপ্ন বুকে বেধে আছে রাসেল। তিনি বলেন, “সবসময় ব্যাট বল নিয়ে মাঠে পড়ে থাকতে চাই। ক্রিকেটটা এখন একটা জনপ্রিয় খেলা। সবাই মাশরাফি সাকিব ওদের খেলা দেখে আনন্দ পায়। আমিও চাই ওরকম খেলার মাধ্যমে ১৬ কোটি মানুষ বাংলাদেশের সকল মানুষকে আরও আনন্দ দিতে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন