প্রচণ্ড গরমে ১৬ ঘণ্টার রোজা, ইফতারের একটু আগে শুরু হয় ওয়ার্মআপ, ইফতারের আধঘণ্টা পরেই ম্যাচ তবুও রোজা রেখেই পুরো সিরিজ খেলেছেন আফগানিস্তান জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। পবিত্র রমজান মাসে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তানের তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় হিমালয় অধ্যুষিত শহর দেরাদুনে অনুষ্ঠিত হয়েছে সিরিজের ম্যাচগুলো।
পাহাড়ি শহর হওয়ার কারণে দেরাদুনের আবহাওয়া সকালে ও সন্ধায় সম্পূর্ণ দুই রকম। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে শহরটিতে শীত নামে, তবে সারাদিনের আবহাওয়া দিল্লির মতোই থাকে প্রচণ্ড উত্তপ্ত। এমন উত্তপ্ত আবহাওয়ায় রোজা রেখে প্রাকটিস করা যে কোন খেলোয়াড়ের জন্য কঠিন। যদিও তা বাধা হতে পারেনি আফগান ক্রিকেটারদের জন্য।
সিরিজের খেলাগুলো যদিও হয়েছে সন্ধ্যার পরে, তবে ক্রিকেটারদের সাধারণত দিনে দুই সেশন প্র্যাকটিস করতে হয়। আর এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি সিরিজে তো প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে অন্য সময়ের চেয়ে আরো বেশি। তবে এসব কিছুই বাধা হতে পারেনি আফগান ক্রিকেটারদের জন্যা। তারা সবাই রোজা রেখেই পুরো সিরিজ খেলেছেন।
দেরাদুনে সেহরির সময় শেষ হয় রাত সোয়া তিনটায়, আর ইফতার হয় সন্ধ্যা সোয়া সাতটায়। সে হিসেবে শহরটিতে রোজা রাখতে হয় ১৬ ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময় রোজা রেখেই সন্ধ্যার পর প্রতিটি ম্যাচ খেলেছেন আফগান ক্রিকেটাররা। আবার যেদিন ম্যাচ ছিলো না, সেদিন করতে হয়েছে দীর্ঘ সময় প্র্যাকটিস। যা সারাদিন অভূক্ত থাকা থাকা ক্রিকেটারদের জন্য কঠিনই বটে।
টস হয়েছে স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়। যা ইফতারির মাত্র ১৫ মিনিট পর। ছয়টার মধ্যেই মাঠে চলে আসতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। ইফতারে আধাঘণ্টা আগে শুরু করতে হয়েছে ওয়ার্মআপ। এরপর ওয়ার্মআপের মধ্যেই সুযোগ মতো সেরে নিতে হয়েছে ইফতার, পাশাপাশি চলেছে ম্যাচের জন্য অন্যান্য প্রস্তুতি।
ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওয়ার্মআপের সবচেয়ে শেষ দিকে ছিলো ফিল্ডিং প্র্যাকটিস। আয়ারল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান জন মুনি আফগাস্তিানের ফিল্ডিং কোচ। তার সাথে সেই ইফতারির আগ মূহুর্তে বাউন্ডারি লাইনে বল আটকানোর মহড়া দিয়েছেন আফগান খেলোয়াড়রা। করেছেন ডিরেক্ট হিট ও অনেক দূরের ক্যাচ নেয়ার প্র্যাকটিস।
গতকাল ম্যাচের শেষ বলটিতে আরিফুল হকের শট যেভাবে ফিরিয়ে শফিকুল্লাহ শফিক ম্যাচ জিতিয়েছেন দলকে সেটি যেকোন বিচারে সেরা। মূলত জন মুনির অধীনেই দলটি উন্নতি করেছে ফিল্ডিংয়ে।
হোয়াইটওয়াশ নিয়ে যা বললেন সাকিব
আফগানিস্তানের সাথে সান্ত্বনার জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নেমেও পারল না বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো তাদের। পুরো সিরিজ জুড়েই বাংলাদেশ তেমন চোখে পড়ার মতো পারফরম্যান্স করেছে খুবই কম। তাই তো ম্যাচ শেষে অধিনায়কের কথায় ফুটে উঠলো হতাশা।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান বলেন, ‘আগের দুই ম্যাচের চেয়ে আমরা ভালো খেলেছি। তবে সিরিজটা আমরা যেভাবে খেলেছি, অবশ্যই খুবই হতাশার। আরও ভালো পরিকল্পনা নিয়ে নামতে হবে আমাদের।’
গতকালের ম্যাচ নিয়ে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘তাদেরকে অল্প রানে আটকে রাখতে পেরেছিলাম। বিশ্বাস ছিল, এই রান তাড়া করার মতো ব্যাটিং আমাদের আছে। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে পারিনি। আজকে অনেক কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু মাঝের কিছু ওভারে মাত্র ৩-৪ রান করে হয়েছে। এটার মূল্য দিতে হয়েছে।’
মিডল অর্ডারে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিং অবশ্য প্রশংসা পেয়েছে অধিনায়কের। তিনি বলেন, ‘মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক ভালো খেলেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে শেষ করতে পারেনি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমনটি হতেই পারে। ’
কন্ডিশন নিয়েও সন্তুষ্টু ছিলেন না বাংলাদেশ দলের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। দেরাদুনের কন্ডিশন বাংলাদেশের মতো নয় যেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিলো বলে মনে করেন। আর উইকেটের সুবিধা কাজে লাগিয়ে আফগান স্পিনারা যে সুবিধা নিয়েছে সেটিকে কৃতিত্ব দিতেও ভুল করলেন না। আর সবগুলো সেক্টরের উন্নতির তাগিদ অনুভব করছেন বলেই জানালেন।
দারুণ লড়াইয়ের পরও হোয়াইটওয়াশ লজ্জা
দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেও তিন ম্যাচ সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ১ রানে পরাজিত হয়ে হোয়াটওয়াশ হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বৃহস্পতিবার ভারতের দেরাদুনে শেষ ম্যাচে আফগানদের দেয়া ১৪৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৪৪ রানে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। এর ফলে ক্রিকেটের নতুন উদীয়মান শক্তি আফগানিস্তানের কাছে হোয়াইটওয়াশ লজ্জা বরণ করতে হলো বাংলাদেশকে।
রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পরে বাংলাদেশ। দলীয় ১৬ রানে ওপেনার তামিম ইকবাল ফিরে যাওয়ার পর ৩২ ও ৩৫ রানে রান আউটের শিকার হন সৌম্য সরকার ও লিটন দাস। এর কিছুক্ষণ পর ফিরে যান অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। দলীয় রান তখন ৫৩।
এরপর মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের পঞ্চম উইকেটের জুটি লড়াইয়ে ফেরায় বাংলাদেশকে। দুজনে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন। মুশফিক কিছুটা ধীর গতিতে ব্যাটিং করলেও মাহমুদুল্লাহর ব্যাট ছিলো চড়াও। তবে রশিদ খানের করা ১৮তম ওভারে মাত্র ৩ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। এখানে পিছিয়ে যায় টাইগার বাহিনী।
শেষ দুই ওভারে দরকার ছিলো ৩০ রান। করিম জানাতের করা ১৯তম ওভারে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন
মুশফিক। টানা ৫টি বাউন্ডারি আদায় করে নেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। শেষ বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে ওই ওভার থেকে আসে ২১ রান। ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ।
শেষ ওভারে দরকার ছিলো ৯ রান। বল করতে আসে আফগানিস্তানের সেরা বোলার লেগ স্পিনার রশিদ খান। রশিদের প্রথম বলেই আউট হয়ে যান মুশফিক। ৩৭ বলে ৪৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি শেষ হয় ডিপ স্কয়ার লেগে নাজিবুল্লাহ জাদরানের ক্যাচে।
৫ বলে দরকার ৮ রান। মাহমুদুল্লাহ এক রান নেয়ার পর নতুন ব্যাটসম্যান আরিফুল পরের বলে নেন দুই রান। এর পরের বলে আরেকটি সিঙ্গেল নিলে সমীকরণ দাড়ায় ২ বলে ৫ রানের। পঞ্চম বলে সিঙ্গেল নেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ বলে দরকার চার। আরিফুলের উচু করে মারা শট বাউন্ডারি দারুণ ফিল্ডিং করে ম্যাচ বাঁচান আফগান ফিল্ডার শফিক। দৌড়ে দুই রান নেন ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশ হারে এক রানে।
৩৮ বলে ৪৫ রান করে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। চার ওভারে ২৪ রান দিয়ে এক উইকেট নেয়া রশিদ খান এই ম্যাচেও আফগানদের জয়ের নায়ক।
সিটি২৪নিউজের ফেসবুক পেজে লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন