শিরোনাম

প্রচ্ছদ /   বেতন ভাতা নিয়ে দুঃসংবাদ পেল শিক্ষকরা

বেতন ভাতা নিয়ে দুঃসংবাদ পেল শিক্ষকরা

Avatar

সোমবার, এপ্রিল ১৩, ২০২০

প্রিন্ট করুন

মার্চের বেতন নিয়ে – বিশ্বের মত বাংলাদেশেও হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এই ভাইরাসে প্রায় ৬২১ মানুষ আক্রান্ত। দেখতে দেখতে মৃত্যুর কোলে শায়িত হয়েছেন ৩৪ জন। এমন পরিস্থিতিতে বন্ধ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আদায় হচ্ছে না কোনো টিউশন ফি। এ অবস্থায় হঠাৎ করেই আর্থিক সংকটে পড়েছে বেসরকারি সব স্কুল-কলেজ। এগুলোর সিংহভাগ শিক্ষক-কর্মচারীই এমপিওভুক্ত নন। আবার এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই পরিশোধ করা হয়। গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে টানা ছুটি।

রাজধানীর বড় ও খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা বলছেন, অনেকটা আকস্মিকভাবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এমন অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য তেমন কোনো আর্থিক প্রস্তুতিও নেই প্রতিষ্ঠানের। মার্চ মাসের বেতন টেনেটুনে পরিশোধ করা হলেও চলতি মাসে কীভাবে বেতন-ভাতা দেবেন, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। তবে সবচেয়ে বিপদে পড়েছে ছোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের আয় কম।

রাজধানীর নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফৌজিয়া রেজওয়ান সম্প্রতি বলেন, বেইলি রোডের মূল শাখাসহ তার প্রতিষ্ঠানের চারটি শাখায় প্রতি মাসে তিন কোটি ২২ লাখ টাকা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে হয়। তারা মার্চ মাসের বেতন দিয়েছেন। তবে করোনার প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে এপ্রিলের বেতন মে মাসে গিয়ে কীভাবে দেবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না। মে মাসে ঈদুল ফিতর থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের ঈদ বোনাসও দিতে হবে। অধ্যক্ষ ফৌজিয়া জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে প্রতি তিন মাসের বেতন একসঙ্গে নেওয়া হয়। জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বেতন তাদের আদায় করা ছিল। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে পড়ায় এপ্রিল থেকে জুনের বেতন নেওয়া হয়নি।

ফৌজিয়া রেজওয়ান জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর অভিভাবকদের টিউশন ফি দেওয়ার জন্য অনলাইন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সংকটের মাত্রা বুঝে অভিভাবকদের নোটিশ করা হবে। কারণ এই পরিস্থিতিতে একসঙ্গে তিন মাসের বেতন বাবদ প্রায় ছয় হাজার টাকা দেওয়া অভিভাবকদের জন্যও কষ্টকর হয়ে যাবে।

রাজধানীর বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। মতিঝিলের মূল শাখা ছাড়াও বনশ্রী ও মুগদাপাড়ায় এর শাখা রয়েছে। ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে আড়াই কোটির বেশি টাকা বেতন-ভাতা দিতে হয় বলে জানালেন অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। তিনি বলেন, আমরা সাধারণত তিন মাসের বেতন একসঙ্গে নিয়ে থাকি। তবে জানুয়ারির বেতন ও ভর্তি ফি একসঙ্গে নেওয়া হয়। অনেকে এখনও জানুয়ারির বেতনই দেননি। ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বেতন মার্চের ৫, ১৫ ও ২৫ তারিখে পরিশোধের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। ১৭ মার্চ থেকে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় টিউশন ফি আদায় করা যায়নি। এদিকে ঈদের আগে প্রতিষ্ঠান খোলা অনিশ্চিত। না খুললে প্রতিষ্ঠানের ৬২৫ শিক্ষক ও দুই শতাধিক কর্মচারীর বেতনের ব্যবস্থা করতে হবে গভর্নিং বডিকে। সবকিছু নির্ভর করছে তাদের সিদ্ধান্তের ওপর।

মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার পাশাপাশি আরও তিনটি শাখা রয়েছে শেওড়াপাড়া, ইব্রাহীমপুর ও রূপনগরে। এ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, তাদের শিক্ষক-কর্মচারী মিলে জনবল ৮৫০-এর বেশি। তাদের প্রতি মাসে বেতন দিতে হয় চার কোটি টাকার বেশি। টিউশন ফি ছাড়া তাদের প্রতিষ্ঠানের আর কোনো আয় নেই। করোনার বন্ধ দীর্ঘায়িত হলে তাই সমস্যা হবে। তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হলেও প্রতিষ্ঠানের অফিস কয়েকদিনের জন্য খুলে দেওয়া গেলে অভিভাবকরা এসে টিউশন ফি দিয়ে যেতে পারতেন।

মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলী জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে বেতন-ভাতা নিয়ে সংকট হবে না। এ প্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা বাবদ খরচ কোটি টাকার ওপরে। ১০ হাজার শিক্ষার্থীর এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারী ১৭০ জনের মতো। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে তিনি আগেই মার্চের বেতনের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। এপ্রিলের বেতনেও সমস্যা হবে না। কারণ তাদের চলতি হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ রাখা আছে।

মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে অবস্থিত ঢাকা স্টেট কলেজের শিক্ষার্থী দুই হাজার ২০০। শিক্ষক-কর্মচারী শতাধিক। অধ্যক্ষ দিলওয়ারা ইসলাম জানান, তারা প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকা বেতন-ভাতা দেন। এখন কোনো টিউশন ফি আদায় হচ্ছে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। তার প্রস্তাব, পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার মাত্র চার-পাঁচ দিনের জন্য প্রতিষ্ঠানের অফিস খুলতে দিক। মিরপুর সিদ্ধান্ত হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম রনি জানান, প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থীর এই বিদ্যালয়ে অর্ধশত শিক্ষক-কর্মচারী। প্রতি মাসে স্যালারি দিতে হয় ১৩ লাখ টাকা। এখন বন্ধে টিউশন ফি আদায় বন্ধ, প্রথম পর্বের পরীক্ষা হলেও কিছু আয় হতো। এ পরিস্থিতিতে সেটাও বন্ধ।

কদমতলী থানার রায়েরবাগের জনতাবাগ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. জাকির হোসেন জানান, তাদের বেতন-ভাতা বন্ধের উপক্রম। টিউশন ফি আদায় করা যাচ্ছে না।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন