শিরোনাম

প্রচ্ছদ /   পিটা সালারে, কুত্তার বাচ্চারে গরম তেলে ডুবা!

পিটা সালারে, কুত্তার বাচ্চারে গরম তেলে ডুবা!

Avatar

বুধবার, জুন ৬, ২০১৮

প্রিন্ট করুন

অবশেষে গ্রেফতার হলেন শিশু নির্যাতনে নির্দেশদাতা ম্যানেজার রবিউল ইসলাম। তবুও থামেনি স্থানীয়দের উত্তেজনা।

সেমাই কারখানায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতনে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে বগুড়ার কাহালু উপজেলার শেখাহার উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির ছাত্র সজীব (১৩)। শ্রমিকের কাজ না করায় রবিবার (৩ জুন) দুপুরে কারখানার ম্যানেজার রবিউলের নির্দেশে রুহানী রনি, মাসুদ ও ওয়ারিশ সহ কয়েকজন ব্যক্তি সজীবকে কারখানায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে লোহার রড দিয়ে সজোরে আঘাত করে স্কুলছাত্রের মাথা থেতলিয়ে দেয়। ওইদিন দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রক্তাক্ত স্কুলছাত্রকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছিলেন পরিবারের লোকজন। রাত ১১টার দিকে সময়ের কন্ঠস্বর বগুড়া অফিসে মুঠোফোনে শিশু নির্যাতনের খবর আসে। মুহুর্তের মধ্যে বগুড়া শহরের কানছগাড়ীর ময়েজ মিয়ার বাগানবাড়ী এলাকার তেসলা নিউরোসাইন্স হসপিটালে সময়ের কন্ঠস্বর প্রতিনিধিরা তথ্য ও ছবি সংগ্রহের জন্য ছুটে যান।

তাৎক্ষনিক তথ্যে সময়ের কন্ঠস্বরে ‘নির্যাতনে মৃতুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শিশু সজীব, ঈদে নতুন পোষাক কেনা হচ্ছে তার’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর ‘কত টাকা লাগে দিচ্ছি, মামলা করবেন না’ শীর্ষক আরেকটি সংবাদ সময়ের কন্ঠস্বরে প্রকাশিত হলে অভিযুক্ত ‘ভাই’ ভাই সেমাই কারখানার মালিক সাজ্জাদ হোসেনের অপচেষ্টা শুরু হয়। সাংবাদিকদের লিখুনি বন্ধ করতে ও নির্যাতনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে একটি বিশেষ মহলও। হুমকি ধামকিতেও সময়ের কন্ঠস্বরে সংবাদ প্রকাশ থেমে থাকেনি। অবশেষে ঘটনার পরের দিন সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয় কারখানার পাষন্ড ম্যানেজার রবিউলকে। তার বাড়ি কাহালু উপজেলার নারহট্র ইউনিয়নের লোহাজাল গ্রামে। নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত অনেকেই এখনো অধরা। স্কুলছাত্র সজীবের পিতা ভ্যান চালক ফেরদৌস আলী বাদী হয়ে ম্যানেজার রবিউল সহ তিনজনের বিরুদ্ধে কাহালু থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে শিশুদের দিয়ে শ্রমিকের কাজ করানো সেমাই কারখানার মালিক সাজ্জাদ হোসেনকে মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি। এনিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সঞ্চালন হয়েছে।

সূত্রমতে, সংসারে অভাবের কারণে স্কুলছাত্র সজীব লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন হোটেল ও বৃত্তবানদের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে। কিছুদিন ধরে সজীব কাজ নেয় শেখাহার বাজারে সাজ্জাদ হোসেনের ভাই ভাই লাচ্চা সেমাইয়ের কারখানায়। মালিকের ভাই রবিউল ইসলাম সেখানকার ম্যানেজার। সজীবের শরীর খারাপ ছিল, তাই কাজে আসেনি। কাজে আসতে পারবে না বলতে রবিবার দুপুরে কারখায় গিয়েছিল।

সেমাই কারখানার কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সজীব ম্যানেজারকে বলছিল ‘আমার শরীর খারাপ। আজ কাজ করতে পারব না। গত দুইদিনের মজুরির টাকা দেন, নইলে না খেয়ে থাকতে হবে’ বলতেই রেগে গেলেন ম্যানেজার রবিউল। কারখানায় শ্রমিক সংকট, শরীর খারাপ হলেও কিছু করার নেই, আগে কাজ কর, পরে টাকা দেব। জোর করে সজীবকে দিয়ে কাজ করানোর চেষ্টা চলছিল। সজীব বারবার কাজ করতে পারবে না বলছিল। এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে ম্যানেজার রবিউলের নির্দেশে রুহানী রনি, মাসুদ ও ওয়ারিশ সহ কয়েকজন ব্যক্তি স্কুলছাত্র সজীবকে কারখানায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন শুরু করে।

তখন ম্যানেজার রবিউল উচ্চকন্ঠে বলছিল, ‘সালাকে পিটা কত টাকা লাগবে দেখব, মুখের উপর বলছে কাজ করবে না’ এর অবস্থা দেখে সবাই চুপচাপ কাজ করবে। পিটা সালারে, কুত্তার বাচ্চারে গরম তেলে ডুবা। নির্যাতনের সময় স্কুলছাত্রের মাথায় লোহার রড দিয়ে থেতলিয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীর লোকজন। অচেতন অবস্থায় সজীবকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার অবস্থা এখনো আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তেসলা নিউরোসাইন্স হসপিটালে স্কুলছাত্র সজীব মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন অনেক টাকা। পরিবারটি খুবই গরীব। শেষ সম্বল বিক্রি করে হলেও সজীবের চিকিৎসার খরচ উঠবে না। অসচ্ছল সংসারে বাবা একজন ভ্যান চালক।

সজীবের পরিবার বলছে, আর মাত্র ক’দিন পরেই ঈদ। কিনতে হবে নতুন জামা-কাপড়। অসচ্ছল পরিবারে দু বেলা মুখে খাবার জোটে, নতুন কাপড় দিবাস্বপ্ন। এজন্য নিজের পরিশ্রমের টাকায় পোষাক কিনবে বলে সেমাই তৈরীর কারখানায় কাজ নিয়েছিল স্কুলছাত্র সজীব (১৩)। শরীর খারাপের কারণে মাত্র একদিন কাজ করবে না বলেছিল, এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে মালিকের লোকজনের অমানবিক নির্যাতন করেছে। লোহার রড দিয়ে আঘাত করে সজীবের মাথা থেতলিয়ে দিয়েছে।

এপ্রসঙ্গে কাহালু থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. শওকত কবির বলেন, শিশু নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত ম্যানেজারকে গ্রেফতার করে কোর্ট হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেফতার প্রচেষ্টা চলছে।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন