ইংরেজিতে একটা কথা আছে ‘Size does not matter’। তবে খেলাটা যখন ক্রিকেট, তখন সাইজটা কিছুটা হলেও ম্যাটার করে। খাটো আকৃতির খেলোয়াড়দের চেয়ে লম্বা আকৃতির খেলোয়াড়রা একটু বেশি সুবিধা করতে পারেন। সেটা ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও। তবে তাই বলে খাটো আকৃতির ক্রিকেটাররা ভালো করেননি? করেছেন এবং করছেন।
ক্রিকেট ইতিহাস যেমন ৭ ফুটের অধিক উচ্চতার ক্রিকেটার দেখেছে। তেমনি দেখেছে ৫ ফুট ও তার সামান্য কিছু বেশি উচ্চতার ক্রিকেটারদেরও। ক্রিকেট ইতিহাসের তেমনই দশজন খাটো তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক আয়োজনের দ্বিতীয় পর্ব আজ তুলে ধরা হল:
১. হ্যারি পিলিং, ইংল্যান্ড : উচ্চতা ৫.৩ ফুট
৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উচ্চতা নিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে খাটো আকৃতির খেলোয়াড়দের মধ্যে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন ইংল্যান্ডের হ্যারি পিলিং। তিনি ১৯৪৩ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুবরণ করেন ২০১২ সালের ২২ সপ্টেম্বর। ইংল্যান্ডের ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৩৩৩টি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৫ হাজার ২৭৯ রান করেছিলেন। ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে তিনি খেলতেন ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে। ল্যাঙ্গাশায়ারের হয়ে ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত খেলেন। ল্যাঙ্কাশায়ারের হয়ে তার স্মরণীয় ইনিংস ছিল অপরাজিত ৭০ রানের। যা তার দেশকে প্রথম জিলেট কাপের শিরোপা জেতাতে সহায়তা করেছিল।
২. মমিনুল হক, বাংলাদেশ : উচ্চতা ৫.৩ ফুট
আকৃতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক রয়েছেন সপ্তম স্থানে। তার উচ্চতা ৫ ফুট ৩.৫ ইঞ্চি। ১৯৯১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মুমিনুল কক্সবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ৮ মার্চ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় মুমিনুলের। অভিষেকেই হাফ সেঞ্চুরি করেন বাংলাদেশের এই ক্ষুদে ক্রিকেটার। অভিষেক টেস্ট সিরিজে তিন ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ১৫৬ রান। যার গড় ছিল ৫২। বাংলাদেশের হয়ে এ পর্যন্ত ১৭টি টেস্টে ৫৬ গড়ে রান করেছেন ১ হাজার ৪৫৬টি। সেঞ্চুরি রয়েছে ৪টি। আর হাফ সেঞ্চুরি ৯টি। ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় তার। ২৬টি ওয়ানডে ম্যাচে করেছেন ৫৪৩ রান। সর্বোচ্চ রান ৬০।
৩. আলভিন কালিচরণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ : উচ্চতা ৫.৪ ফুট
ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে খাটো ক্রিকেটারদের তালিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের আলভিন ইসাক কালিচরণ রয়েছেন অষ্টম স্থানে। যার উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। ১৯৪৯ সালের ২১ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি ইন্দো-গায়ানার হয়ে ক্রিকেট খেলেন।
তিনি ছিলেন বাহাতি ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি অফ স্পিনার। ১৯৭৩ সালে তিনি উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ বিশ্বকাপে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্য ছিলেন। তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১৮৭ রান। যা তিনি ১৯৭৮-৭৯ মৌসুমে ভারত সফরে করেছিলেন।
ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে তিনি ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে খেলতেন। ১৯৮৪ সালে অক্সফোর্ডশায়ারের বিপক্ষে ন্যাটওয়েন্ট ট্রফিতে ২০৬ রান করার পাশাপাশি ৩২ রানে ৬ উইকেট নেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫৮ রান করেছিলেন। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে ক্লাইভ লয়োড অবসর নিলে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পান।
৪. ডেভিড উইলিয়ামস, ওয়েস্ট ইন্ডিজ : উচ্চতা ৫.৪ ফুট
ক্রিকেট ইতিহাসের অষ্টম খাটো খেলোয়াড় ডেভিড উইলিয়ামস ১৯৬৩ সালের ৪ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন উইকেটরক্ষক কাম লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান। ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ১১টি টেস্ট ও ৩৬টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি মাত্র একবার হাফ সেঞ্চুরি করতে পেরেছিলেন। ১৯৯৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ৬৫ রানের ইনিংস খেলেন। তার এই ইনিংসে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩ উইকেটের জয় পেয়েছিল।
১২৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তিনি ৩ হাজার ৬৩ রান করেছিলেন। যার মধ্যে দুটি সেঞ্চুরি ও ৮টি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উইকেটের পেছনে তিনি ১৫১টি ক্যাচ নেওয়ার পাশাপাশি ৩৯টি স্ট্যাম্পিং করেন।
২০০৭ সালে তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ২০০৯ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হঠাৎ একদিন মাঠে নেমে তিনি সবাইকে বিস্মিত করে দেন। সেদিন অবশ্য তিনি বদলি ফিল্ডার হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন।
৫. তাতেন্দা তাইবু, জিম্বাবুয়ে : উচ্চতা ৫.৫ ফুট
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে খাটো খেলোয়াড়দের তালিকায় জিম্বাবুয়ের তাতেন্দা তাইবু রয়েছেন দশম স্থানে। যার উচ্চতা ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। ১৯৮৩ সালের ১৪ মে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জিম্বাবুয়ের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ছিলেন। তবে মাঝে মাঝে স্পিন বলও করতেন। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিম্বাবুয়েকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কম বয়সী টেস্ট অধিনায়ক হন। ২০১২ সালের ১০ জুলাই মাত্র ২৯ বছর বয়সে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ধর্মসেবায় নেমে পড়েন।
২৮ টেস্টে তিনি ১ হাজার ৫৪৬ রান করেন। যেখানে ১টি সেঞ্চুরি ও ১২টি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। ১৫০টি ওয়ানডে ম্যাচে তিনি ৩ হাজার ৩৯৩ রান করেন। যেখানে ২টি সেঞ্চুরি ও ২২টি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। টেস্ট ও ওয়ানডের পাশাপাশি ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেন তিনি। ১১৪টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৬ হাজার ৮০৪ রান করেন। যেখানে ১২টি সেঞ্চুরি ও ৩৯টি হাফ সেঞ্চুরি ছিল। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল অপরাজিত ১৭৫ রান।
সিটি২৪নিউজের ফেসবুক পেজে লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন