শিরোনাম

প্রচ্ছদ /   আশরাফুলকে জাতীয় দলে ফিরতে দুই শর্ত বেধে দিলেন বিসিবির প্রধান কোচ

আশরাফুলকে জাতীয় দলে ফিরতে দুই শর্ত বেধে দিলেন বিসিবির প্রধান কোচ

Avatar

শুক্রবার, মার্চ ২২, ২০১৯

প্রিন্ট করুন

অপরাধপূর্ব এবং অপরাধ-উত্তর সময়ের আয়নায় আগে একবার নিজেকে দেখে নিলেন। দেখে নিয়ে সেই আশরাফুল আর এই আশরাফুলের মধ্যে পার্থক্যটা তুলে ধরলেন তিনি নিজেই, ‘সত্যি কথা হলো আমি আগের মতো ওরকম তো আর নেই।’তবুও ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ অভিযানে তাঁর নামের পাশে পাঁচটি সেঞ্চুরি। এর শেষ তিনটি টানা তিন ম্যাচে। লিস্ট ‘এ’ মর্যাদা পাওয়ার পর এটি প্রিমিয়ার লিগের পঞ্চম আসর। এই আসরেই প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে করেছেন তিন তিনটি সেঞ্চুরি।

পরে লিটন কুমার দাশ ও নাজমুল হোসেন (শান্ত) তাঁকে ছুঁয়ে ফেলতে না ফেলতেই আবার নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে থেমেছেন তিনি। ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে রেলিগেশন লিগের ম্যাচে তাঁর পঞ্চম সেঞ্চুরিটি অপরাজিত ১০২ রানের।বহুকাল পর প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নেমেই এতগুলো সেঞ্চুরি করা সত্ত্বেও নিন্দুকদের কাছে সেসব খুব পাত্তা পাচ্ছে না। এ জন্যই যে এর চারটিতেই যে তাঁর দল হেরেছে। তাঁদের বিপক্ষে আশরাফুলের সাবেক সতীর্থ শাহরিয়ার নাফীসই ব্যাট ধরলেন,

‘দল বাদ পড়ে গেছে কিন্তু সেই দলের একজন আজকের দিন পর্যন্ত লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার। এটা অনেক বড় অর্জন।’আসলেই তাই। ১৩ ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরি ও এক ফিফটিতে ৬৬.৫০ গড়ে লিগের সর্বোচ্চ ৬৬৫ রান তাঁর। ফিরে এসেই এটি অন্তত জানান দিয়ে ফেলেছেন যে অনভ্যাসের মরিচাও ঝরিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন একসময়ের ‘আশার ফুল’।

সেই আশার ফুল মাঝেমধ্যে সৌরভ যেমন ছড়িয়েছে, তেমনি অনৈতিক কাণ্ডের কাঁটায় ভক্তদের ক্ষতবিক্ষতও করেছে। তাতে রক্তক্ষরণ শেষে আবার প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরে রানের ফোয়ারাও ছোটাচ্ছেন। তা ছোটাতে গিয়ে আগের সেই আশরাফুলের জৌলুস আসলে কতটা দেখা গেল?

বিষয়টিকে দুই ভাগে ভাগ করে নিলেন কলাবাগান ক্রীড়া চক্রে তাঁর কোচ জালাল আহমেদ চৌধুরী। প্রতিভায় এবং কার্যকারিতায়। ‘পাঁচ বছর প্রতিযোগিতাোমূলক ক্রিকেটের বাইরে থাকা একটি লোক এরপরও এখন এসে যা খেলছে, তা ওর অসাধারণ প্রতিভার গুণই প্রমাণ করে’-এর পাশাপাশি বলে রাখলেন এটিও, ‘এখন ওর ভেতরে সেই আশরাফুলের ৬০ ভাগ আছে।’প্রায় অর্ধেক আশরাফুলও পাঁচ সেঞ্চুরির বিশ্বাস সঙ্গী করে নিজের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেখেছেন,

‘আগে এক দিন হলে পরের ১০ দিন হতো না। খেলতাম তবে শট সিলেকশন ভালো ছিল না। এখন যে বেশি ভালো হয়ে গেছে, তাও না। কিন্তু একটু ভালো হয়েছে, আরো উন্নতি করতে হবে। সে জন্য প্রচুর অনুশীলন করতে হবে।’রান করবেন বলে পুরনো নিজেতে ফিরে না যাওয়ার সচেতন চেষ্টাও ছিল,

‘পুরো লিগে পুল শট খেলে কোনো চার-ছক্কা মারিনি। পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছি কিন্তু পুল শট মারিইনি। আপনারা জানেন এটা আমার প্রিয় শট। এটা বাদ দিয়েছি। খেলিইনি। বাঁহাতি স্পিনারের বিপক্ষে ডাউন দ্য উইকেটে গিয়ে এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারা যে শট, মারিনি সেটাও।’খুব বেশি মারার চেষ্টায় যাননি বলে এর প্রভাব পড়েছে স্ট্রাইকরেটেও (৭৪.১৩)। নিজেও মানছেন যে তা বাড়াতে হবে। সে জন্য আরেকটু সময় নিয়ে রাখলেন নিজেই,

‘ফিটনেস নিয়ে আরো কাজ করতে হবে। পুরো লিগে স্ট্রাইক রেট ছিল ৭৪। এটাকে আরো ১৬ বাড়াতে হবে। আরেকটু ফিট হলেই সেটি সম্ভব। ৯০-৯৫ স্ট্রাইক রেট আনতে পারলে ভালো হবে। সেটা আস্তে আস্তে হবে।’তিনি নিজেই ধীরে চলো নীতি নিলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে ঘিরে রীতিমতো ঝড় চলছে। যে ঝড় পারলে এখনই তাঁকে জাতীয় দলে ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু আশরাফুল নিজেও জানেন যে তাঁকে আরো অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে মানুষের হুড়োহুড়ির মধ্যেও নিজের ভালোলাগা খুঁজে পেয়েছেন তিনি,

‘এই সেঞ্চুরিগুলো করে উপকারও হয়েছে। মানুষের মুখে মুখে আবার আমার নামটি ফিরেছে।’তবে ভক্তদের মতো জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্নটা এখনো তাঁর অত দ্রুতগামী নয়। কারণ নিজেই মনে করেন তিনি প্রস্তুত নন,

‘এখনো আমি জাতীয় দলে খেলার জন্য প্রস্তুত নই। প্রস্তুত হওয়ার জন্যই পরের চার-পাঁচ মাস আমাকে প্রচুর কষ্ট করতে হবে। আগামী বিপিএল খেলার পরে আসলে বুঝতে পারব আবার বাংলাদেশ দলে খেলার মতো যোগ্যতা আমার হয়েছে কি না। এই মুহূর্তে বলব সেই যোগ্যতা আমার এখনো হয়নি।’সেই যোগ্যতা অর্জন করতে হলে আশরাফুলকে একসঙ্গে করতে হবে দুটি যুদ্ধ। কথার মালায় সেই দুটি যুদ্ধ এভাবেই গাঁথলেন কোচ জালাল,

‘ওর এখন দরকার দুটি যুদ্ধ। চলতি পথের চাহিদার সঙ্গে নিজের গা ভাসানো। জাতীয় দলে ঢোকার জন্য যারা লড়ছে, তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রকৃতির সঙ্গেও একটা যুদ্ধ আছে। শারীরিক গুণাগুণ ধরে রাখা। এখন যা আছে, সেটা ওই প্রতিযোগিতার জন্য যথেষ্ট নয়। সেটাও ওকে অর্জন করতে হবে। ওই আশরাফুলকে ওর ফিরে পেতে হবে। পুরোটা না হলেও অন্তত ৮০ ভাগ!অপরাধ-উত্তর সময়ে সেটিই আশরাফুলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ!

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন