হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টের প্রথম দিন সফরকারী বাংলাদেশের বিপক্ষে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের ২৩৪ রানের জবাবে প্রথম দিন বিনা উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে শেষ করেছে তারা। ফলে বিশাল স্কোরের আভাস দিচ্ছে তারা।
এদিন বাংলাদেশি বোলারদের একেবারেই আমলে নেননি দুই কিউই। ব্যাটিং করতে নেমে দারুণ দায়িত্বশীলতার সাথে খেলে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে গিয়েছেন তারা। গড়েছেন দারুণ একটি উদ্বোধনী জুটি। আর এর মধ্য দিয়ে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী রাভাল। আগামীকাল ৫১ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন তিনি। আর তাঁর সঙ্গী লাথামের ব্যাটিংয়ে নামবেন ৩৫ রান নিয়ে।
এর আগে ম্যাচটির শুরুতে টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। এরপর ব্যাট করতে নেমে প্রথম সেশন বাংলাদেশের পক্ষে গেলেও পরের দুই সেশনে কিউই পেসার নিগ ওয়েগনারের তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
বাংলাদেশের পক্ষে তামিম ইকবাল ছাড়া আর কোন ব্যাটসম্যান দাঁড়াতেই পারেন নি। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১২৮ বলে ১২৬ রান। এই শতকের সুবাদে টেস্ট বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ শতকের মালিক বনে গিয়েছেন তামিম। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে নিগ ওয়েগনার ৪৭ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেছেন।
নিউজিল্যান্ডের বোলারদের পেস বাউন্স এবং সুইংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের শুরুটা অবশ্য ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে করেছিলো তামিম ইকবাল এবং সাদমান ইসলাম অনিক। অনিক একপ্রান্তে ধীরগতিতে ব্যাট করলেও খানিকটা হাত খুলেই খেলেছেন তামিম।
দুই ওপেনারকেও দেখে মনে হচ্ছিল বেশ ছন্দে আছেন তাঁরা। তাঁদের ব্যাটে ভর করে ১০ ওভারের আগেই বাংলাদেশ পায় ৫০ রানের পুঁজি। কিন্তু দলীয় ৫৭ রানে ট্রেন্ট বোল্টের দুর্দান্ত এক ডিলেভারি স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দেয় সাদমান ইসলামের। ২৪ রান করেই ফিরতে হয় এই ওপেনারকে। সাদমান ফিরলেও মমিনুলকে সঙ্গে নিয়ে নিজের স্বাভাবিক খেলা চালিয়ে যান তামিম।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে ৩৮ রানে ব্যাট করছিলেন তামিম ইকবাল। বোলিংয়ে আসা ট্রেন্ট বোল্টকে টানা ৩ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৩৫ স্ট্রাইক রেটে ৩৭ বলে তুলে নেন অর্ধশতক। এক ওভারে ১৭ রান নিয়ে ফিফটি তুলে নেয়ার পাশাপাশি হ্যামিল্টনে বড় ইনিংস খেলার আভাস দেন তামিম।
একপ্রান্তে তামিম হাত খুলে খেললেও অপরপ্রান্তে থাকা মমিনুল হক উইকেটে থিতু হয়ে স্কোরবোর্ডে রান যোগ করছিলেন। কিন্তু লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার খানিক আগেই নিল ওয়েগনারের লেগ সাইডের এক বলকে খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বসেন মমিনুল। ৪৬ বলে ১২ রান করে ফেরেন তিনি।
মমিনুল ফিরলেও সেঞ্চুরির পথে হাঁটতে থাকেন তামিম ইকবাল। ৮৬ রানে অপরাজিত থেকে লাঞ্চে যান তিনি। এর আগে পুরো ইনিংস জুড়ে ব্যাট করেছেন ওয়ানডে মেজাজে। ফিফটি হাঁকিয়েছেন ৩৭ বলে, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে জীবনও পেয়েছেন ৬৫ রানে ব্যাট করা অবস্থায়। জীবন পেয়েও ব্যাটিংয়ের ধরণ বদলান নি তামিম।
নিল ওয়েগনারের বাউন্সারকে পুল করে লেগ সাইডে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১০০ বলে ১০০ স্ট্রাইকরেটে টেস্টে ওয়ানডে মেজাজি ব্যাটিং করে ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি তুলে নেন এই বাঁহাতি ওপেনার। যেখানে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১৮টি চার।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটি তাঁর প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি আর এই নিয়ে ৯ বছর পর ঘরের বাইরে শতক হাঁকালেন তামিম। অবশ্য তামিম সেঞ্চুরি হাঁকানোর দুই ওভার পরই ওয়েগনারের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে উইকেট নিয়ে বসেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। এর খানিকপর ১ রান করে উইকেটের পেছনে টিম সাউদিকে উইকেট বিলিয়ে দেন সৌম্য সরকারও।
৬৫ রানে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে জীবন পেলেও ব্যক্তিগত ১২৬ রানে থাকা অবস্থায় তাঁকেই উইকেট ছুঁড়ে দেন তামিম। ১২৮ বলে ২১ চার এবং ১ ছক্কার সাহায্যে সাজানো ইনিংসটি থামে গালিতে কেন উইলিয়ামসনের হাতে তালুবন্দি হয়ে।
প্রথম সেশনে ১ উইকেট নেয়ার পর দ্বিতীয় সেশনে আরও বিধ্বংসী বোলিং করেন কিউই পেসার নিল ওয়েগনার। তুলে নেন আরও ৩টি উইকেট। তাই পেস এবং বাউন্সের সামনে উইকেট ছুঁড়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং মেহেদি হাসান মিরাজরা।
ওয়েগনারের পেসের সামনেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের মিডেল অর্ডার। ৭ উইকেটে ২১৭ রান নিয়ে চা বিরতিতে যায় দুইদল। দ্বিতীয় সেশনটি যায় কিউইদের পক্ষে। শেষ সেশনে ব্যাট করতে নেমে বেশীক্ষণ আর ব্যাটিং করা হয় নি টাইগারদের।
টেইলেন্ডাররা আসা যাওয়ার মাঝে থাকলেও দেখে শুনে রান যোগ করছিলেন লিটন দাস। কিন্তু তাঁকেও শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় করে নিজের পঞ্চম উইকেট তুলে নেন ওয়েগনার। আর বাংলাদেশ অল আউট হয় ২৩৪ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশঃ ২৩৪/১০ (৫৯.২ ওভার) (প্রথম ইনিংস) (তামিম- ১২৬; ওয়েগনার ৫/৪৭, সাউদি- ৩/৭৬)
নিউজিল্যান্ডঃ ৮৬/০ (২৮ ওভার) (প্রথম ইনিংস) (রাভাল- ৫১, লাথাম-৩৫; রাহি-১৫/০, এবাদত-২৬/০)
সিটি২৪নিউজের ফেসবুক পেজে লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন