পঞ্চগড়ের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২০০১ সালে জন্ম শরিফুল ইসলামের। যেখানে নেই কোনো ইলেকট্রিসিটি, ভালো মানের বিদ্যালয় কিংবা আধুনিক সুযোগ সুবিধা। আর টেলিভিশন? সে তো দূর কি বাত! বাজার ছাড়া টিভির দেখা সেখানে মেলে না। সেই অঞ্চলই জন্ম দিয়েছে শরিফুল নামক এক অমিত প্রতিভার। যার বোলিং স্টাইল কিছুটা পাকিস্তানি কিংবদন্তী পেসার ওয়াসিম আকরামের মতো!
যারা ওয়াসিমের খেলা দেখেছেন তারা শরিফুলের বোলিং অ্যাকশন চাক্ষুস প্রত্যক্ষ করলে হয়তো মিল খুঁজে পাবেন অনায়াসেই। শুধু বোলিং স্টাইলের দিক থেকেই নয়, নিখুঁত লাইন এবং লেন্থ ঠিক রেখে বোলিং করে যাওয়ার দিক থেকেও মিল রয়েছে শরিফুলের। অমিত প্রতিভার অধিকারী এই পেসারকেই এবার দলে ভিড়িয়েছে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের (ডিপিএল) দল প্রাইম ব্যাংক।
সাধারণত যারা প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পান তাদের অনেকেরই প্রথম অথবা দ্বিতীয় বিভাগে খেলার অভিজ্ঞতা থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম শরিফুল। কেননা প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বিভাগে খেলার কোনো প্রকার অভিজ্ঞতা ছাড়া সরাসরি ডিপিএলে খেলার সুযোগ হয়েছে তাঁর। মূলত একজন খাঁটি পেস তারকা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা দেখেই শরিফুলকে দিলে ভিড়িয়েছে প্রাইম ব্যাংক।
১৬ বছরের টগবগে এই তরুণ অবশ্য প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চেনাতে সময় নেননি। শক্তিশালি আবাহনীর বিপক্ষে গত ম্যাচে ৫১ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে মাশরাফিদের ব্যাটিং লাইন আপে ধ্বস নামিয়েছিলেন তিনি। আর তাঁর দল আবাহনীকে হারিয়েছিলো ৯ রানের ব্যবধানে। আর দুর্দান্ত বোলিং পারফর্মেন্স উপহার দেয়ায় ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন শরিফুল।
মূলত আবাহনীর বিপক্ষে ভালো খেলার ব্রত নিয়েই সেদিন মাঠে নেমেছিলেন অনূর্ধ্ব ১৭ দল থেকে উঠে আসা এই তরুণ। এর ব্যাখ্যা অবশ্য নিজেই দিয়েছেন তিনি। মাশরাফির দলকে হারিয়ে রীতিমত উত্তজনায় ছটফট করা শরিফুল বলছিলেন,
‘ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলার সুযোগ পাওয়ার পর প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল আবাহনীর বিপক্ষে ভালো করা। কারণ আবাহনী মাশরাফি ভাইয়ের দল, চ্যাম্পিয়ন দল, বড় শক্তি। এই ম্যাচটি জেতাটাও আমাদের জন্য খুব দরকার ছিল। আর আবাহনীকে হারানো মানে অনেক কিছু!’
এখনও কৈশোরের সারল্য বিদায় নেয়নি শরিফুলের। কিন্তু তাঁর মাঠের শরীরী ভাষা এবং বোলিংয়ের নিখুঁত লাইন-লেন্থ দেখে কে বলবে বোলিং করছেন ১৬ বছরের একজন কিশোর? সবথেকে বড় কথা হলো একজন পেসারের যে আক্রমণাত্মক মনোভাব থাকা দরকার এর পুরোটাই বলতে গেলে বিদ্যমান দেখা গেছে শরিফুলের বোলিংয়ে। পাশাপাশি লম্বায় প্রায় ৬ফুট ৩ ইঞ্চি হওয়ায় বাড়তি সুবিধাও পেয়ে থাকেন তিনি।
শুধু কি তাই? বেশ কিছুদিন থেকেই বাংলাদেশ যখন একজন নতুন বলের আদর্শ পেসার হন্যে হয়ে খুঁজছে ঠিক তখনই যেন সেখানে আলোকবর্তিকার মতো এসে হাজির হলেন পঞ্চগড়ের শরিফুল। নতুন বলে বোলিং করার দারুণ দক্ষতা রয়েছে তাঁর। যার প্রমাণ তিনি রেখেছেন আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচেই। সেই ম্যাচে নতুন বলে বোলিংয়ে এসেই নাজমুল হাসান শান্ত এবং মোহাম্মদ মিথুনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন তিনি।
নতুন বলে বোলিং করতে নিজেও অভ্যস্ত শরিফুল। কিন্তু পুরনো বলে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না তিনি। নিজেই বললেন, ‘নতুন বল যখন হাতে আসে তখন আত্মবিশ্বাস বেশি থাকে যে নতুন বলে সুইং বেশি হবে। আর স্লগে (পুরনো বলে) একটু নার্ভাস লাগে, ভালো ব্যাটসম্যান থাকলে মেরে দিবে এমনটা মনে হয়। স্লগের জন্য আরো অনুশীলন করলে স্লগেও ভালো করতে পারবো ইনশাল্লাহ।’
একটা সময় যেখানে এদেশে নতুন বলের পেসার হিসেবে তাপস বৈশ্য, সৈয়দ রাসেল এবং তালহা জুবায়েরকে চিনতেন সকলে। তাপস, রাসেলদের সেই যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তাদের সেই স্থান একাই দখল করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ম্যাশের স্থলাভিসিক্ত কে হবেন সেটি নিয়েই এতদিন দুশ্চিন্তা ছিলো ক্রিকেট বোর্ডের। শরিফুলের সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে হয়তো সেই অভাব কিছুটা হলেও মিটবে। আর বাংলাদেশ খুঁজে পাবে নতুন বলের নতুন এক নতুন মাশরাফির।
সিটি২৪নিউজের ফেসবুক পেজে লাইক দিন
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন