শিরোনাম

প্রচ্ছদ /   কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম কীভাবে চিনবেন?

কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম কীভাবে চিনবেন?

Avatar

রবিবার, জুন ১০, ২০১৮

প্রিন্ট করুন

ফলের রাজা আম। এখন বাজারের মধ্যে গেলে দেখতে পাবেন ফলের বিক্রেতারা নানা রকমের আম নিয়ে তাদের ফলের পসরা সাজিয়েছে। কী আম নেই সেইখানে। ফজলি, হিমসাগর ,ল্যাংড়া সবকিছু। আর আম খেতে ভালোবাসেন না এমন মানুষ সত্যিই খুঁজে পাওয়া খুব মুশকিল।

তবে পাকা আম দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যাওয়ার পর যখন বাড়িতে খেতে শুরু করেন দেখেন আম তো নয় যেন কোন ঝাঁঝালো ফল খাচ্ছেন আপনি।

সাধারণত গাছ পাকা আমের যে মিষ্টতা তা একদমই এই সব রংচঙে টকটকে আমে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে পাকা আমের নামে আমরা যা কিছু খাচ্ছি তা কী গ্যাসে পাকানো আম? আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বাজারে কী এখন তাহলে ফরমালিন যুক্ত আমে ছেয়ে গিয়েছে?

ক্রেতা ঠকানোর ফন্দি করতে গিয়ে এক শ্রেণির ফল ব্যবসায়ী বহু বছর ধরেই হাতিয়ার করেছেন কার্বাইডকে। ইদানীং সেই প্রবণতা বেড়েছে মারাত্মকভাবে।

ফল ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশই স্বীকার করেন যে, প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে এ ছাড়া পথ নেই। সমতের আগেই কার্বাইড দিয়ে দ্রুত পাকানো যায় ফলকে আর বিক্রি করা যায় চড়া দামে। কিন্তু কার্বাইডে পাকানো ফল খেলে শরীরে পুষ্টি তো যায়-ই না, উপরন্তু এর প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

ফল পাকানোর জন্য ব্যবহৃত এই রাসায়নিকের পোশাকি নাম ক্যালসিয়াম কার্বাইড। হাওয়ার সংস্পর্শে এলে কার্বাইড থেকে অ্যাসিটিলিন নামে এক ধরনের গ্যাস বেরোয়।

এবং এই গ্যাসের উত্তাপেই ফল পেকে যায়। সাথে জেনে রাখুন, ওই গ্যাসই লোহার কারখানায় লোহা কাটতে ব্যবহার হয়! এবং ৫০ টন আম, পাকাতে প্রয়োজন হয় মাত্র ১০০ গ্রাম কার্বাইড।

কার্বাইডে পাকানো ফল নিয়মিত খেলে ফল হতে পারে মারাত্মক। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া, পাকস্থলীর নানা সংক্রমণের পাশাপাশি কার্বাইড থেকে ক্যানসারও হতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসক মহলের। অন্তঃসত্ত্ব নারী কার্বাইডে পাকানো ফল খেলে সন্তানের হতে পারে নানান রকম অস্বাভাবিকতা।

আপনি যে আম বাজার থেকে কিনছেন সেই পাকা আমে যদি মাছি বসে তাহলে তা জানবেন তা প্রাকৃতিক উপায়ে পাকা। কিন্তু সেই আমের ধারেপাশে যদি মাছির কোনো চিহ্ন খুঁজে না পান তাহলে অবশ্যই জানুন সেই আম ফরমালিন বা কার্বাইড জাতীয় গ্যাস দিয়ে পাকানো। এইসব আম কেনা থেকে দূরে থাকুন।

আপনি যে পাকা আম বাজার থেকে কিনছেন সেই আমে যদি দাগ থাকে অর্থাৎ গাছ থেকে আম পড়ে গেলে যেমন হালকা কালো দাগ হয় তেমনি কিছু দাগ থাকলে সেই পাকা আম হবে হালকা সাদা ধরনের।কিন্তু ফরমালিনে চুবানো পাকা আম হয় ঝকঝকে সুন্দর।এইসব আমের গায়ে কোনরূপ দাগের লক্ষণ আপনি পাবেন না। এইরকম পাকা আম কেনা থেকে বিরত থাকুন।

গাছপাকা আমের ত্বকের রঙে ভিন্নতা থাকবেই। অর্থাৎ তা সাধারণত হলুদ, সবুজ বা লালের সংমিশ্রণ হবে। সাধারণত এইসব আমের গোড়ার দিকে গাঢ় রং থাকে। কার্বাইড বা ফরমালিন দিয়ে কৃত্রিম উপায়ে পাকানো আমের রঙে এইরূপ বৈচিত্রতা দেখা যায় না। এইসব পাকা আম পুরোটাই উজ্জ্বল হলুদ হয়ে থাকে।

আবার অনেক সময় কার্বাইডের বা ফরমালিনের পরিমান বেশি হলে এই সব পাকা আমের রং সাদাটে হয়ে যায়।তাই এইসব উজ্জ্বল রঙের আম কিনবেন না।

পাকা আম আপনার নাকের কাছে নিয়ে এসে ভালো করে আমের বোটার কাছে শুঁকে নিন। গাছ পাকা আম হলে তা অবশ্যই বোটার কাছে এক মিষ্টি গন্ধ থাকবে। কিন্তু কার্বাইড বা ফরমালিন দিয়ে পাকা আমের ক্ষেত্রে এরূপ কোন মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে খুবই উগ্র যা এককথায় বললে বিচ্ছিরি গন্ধ পাওয়া যায়।তাই এইসব গন্ধের আম কেনা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

পাকা আম কিনে নিয়ে এসে বাড়ির মধ্যে এমন কোন জায়গায় রেখে দিন যেখানে হাওয়া বাতাস খুব একটা চলে না, কিছুক্ষণ পর যদি আপনি লক্ষ্য করেন বা আমের একটি মিষ্টি গন্ধ আপনার নাকে আসে তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার কেনা পাকা আম প্রাকৃতিক উপায়ে পাকানো।

আর তা যদি কার্বাইড বা ফরমালিন বা অন্য কিছু রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হয়ে থাকে তাহলে তাতে সেইরকম কোন গন্ধ পাবে না বাতাসহীন কোন জায়গায় রাখলে।

পাকা আম মুখে দেওয়ার পর তাতে যদি কোন স্বাভাবিক মিষ্টতা খুঁজে না পান তাহলে জানবেন সেই আম গ্যাস বা ফরমালিন দিয়ে পাকা।গাছ পাকা আম সাধারনত হালকা টক মিষ্টি হয়।কিন্তু গ্যাস পাকা আম ঝাঁঝালো স্বাদের হয়।

হিমসাগর ছাড়াও কিছু ধরনের আম আছে যারা পাকলে সবুজ থাকে তাদের ত্বক অর্থাৎ এইসব আম বাইরে থেকে রং দেখে বোঝার উপায় থাকে না।

কিন্তু গাছপাকা হলে এইসব সবুজ ত্বকের আমে অবশ্যই দাগ থাকবে।আর গ্যাস বা ফরমালিন দিয়ে পাকানো হলে ত্বক একদম দাগহীন হবে এবং ঝকঝকে সবুজ রঙের হয়।

তাহলে এইসব পদ্ধতি বা বিষয় মাথায় রেখে বাজার থেকে পাকা আম কিনে ফলের রাজার প্রাকৃতিক স্বাদ গ্রহণ করুন এবং অন্যকে করান।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন